একিউট ভাইরাল হেপাটাইটিস জনিত জন্ডিস
একিউট ভাইরাল হেপাটাইটিস জনিত জন্ডিস
কারও চোখ হলুদ দেখলে সবাই তাকে জন্ডিসের রোগী ভাবে। জন্ডিস একটা রোগ না বরং একটা রোগ লক্ষন মাত্র। বহু কারনে জন্ডিস হয় ও চোখ হলুদ দেখায়। বিভিন্ন কারনে রক্তের বিলিরুবিন পদার্থটি বাড়লে চোখ, মুখ শরীর হলুদ হয়। একই সাথে প্রসাবও হলুদ হয়। অনেকে চোখের এই হলুদ রংকে ভুল ধারনার বশবর্তী হয়ে হলুদ খাওয়ার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত করেন। কিন্তু টন টন হলুদ খেলেও রক্তের বিলিরুবিন বাড়বেও না এবং চোখও হলুদ হবে না। একিউট হেপাটাইটিসের অনেক রোগীই জন্ডিসে ভোগেন । সল্প মেয়াদি বা একিউট ভাইরাল হেপাটাইটিস জন্ডিস রোগের বড় কারন।
সারা বিশ্বের একিউট ভাইরাল হেপাটাইটিসে আক্রান্তদের পরিমান জানলে বুঝা যাবে হেপাটাইটিসের ব্যাপকতা কতটুকু।
সারা বিশ্বে প্রতিবৎসর ১-৪ মিলিয়ন হেপাটাইটিস A ভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত হয়। হেপাটাইটিস E ভাইরাসের আক্রান্তের হার ২০ মিলিয়ন এবং মৃত্যুর হার ৩.৩%। ১৯১৫ সালের গবেষণার তথ্য অনুযায়ী ২ বিলিয়ন মানুষ হেপাটাইটিস B, ১৮৫ মিলিয়ন C ভাইরাস দ্বারা এবং ১৫ মিলিয়ন D ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়।
পৃথিবীর জনসংখ্যা ২.৩ বিলিয়ন এক অথবা একের অধিক এসব ভাইরাল হেপাটাইটিসের ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত। বাংলাদেশে সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও প্রাথমিক পরিসরে গবেষণায় জানা যায় একিউট ভাইরাস হেপাটাইটিসের প্রায় ৬০% E ভাইরাস জনিত। আমার নিজের গবেষণায় একিউট হেপাটাইটিসের আমার সংগ্রীহিত রোগীদের ডাটার তথ্য অনুযায়ী হেপাটাইটিস রোগীর প্রায় ৬৮% হেপাটাইটিস E দ্বারা আক্রান্ত । বাচ্চারা সাধারণত হেপাটাইটিস A রোগে ভোগে। ৯০ শতাংশ শিশু এবং কিশোর ১০ বৎসর বয়সের আগেই এই জীবানু দিয়ে আক্রান্ত হয়। A এবং E ভাইরাসে আক্রান্তের হার এশিয়ান দেশ গুলোর মানুষের মধ্যে বিশেষভাবে নিম্ন আয়ের লোকদের ভিতর বেশি।
একিউট হেপাটাইটিস বহু কারনে হয়, যেগুলোর মধ্যে লিভারে ভাইরাসের প্রদাহ জনিত কারন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একিউট হেপাটাইটিসের কারনকে এখানে বড় দুই শ্রেণীতে ভাগ করা যায়: ১) ভাইরাল: হেপাটাইটি A, B, C, E এবং হেপাটাইটি D । কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে ইপষ্টিন,হারপিস ও সাইটো মেগালো ভাইরাস একিউট হেপাটাইটিস করে। ২) নন ভাইরাল: মদ্যপান ও বিভিন্ন ধরণের ওষুধ সেবন। হার্বাল মেডিসিন হেপাটাইটিসের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
ভাইরাল জাতীয় লিভারের প্রদাহ বা হেপাটাইটিস একিউট হেপাটাইটিস মূল কারন। এজন্য পাঠকদের মতিভ্রমের মধ্যে না ফেলে ভাইরাল জাতিয় একিউট হেপাটাইটিস নিয়ে আলোচনা করবো
হেপাটাইটিস A ও E ভাইরাস দুটি পানিবাহিত, অর্থাৎ পানি দিয়ে সংক্রমিত হয়। শরীরে প্রবেশ করে লিভারকে আক্রমণ করে। হেপাটাইটি B ,C ও D রক্তবাহিত এবং প্রধানত রক্তের মাধ্যমে ছড়ায়। অন্যান্য কারন গুলি পূর্বের হেপাটাইটিস B, C প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে ( www profmahbubhkhan.com)। সল্প মেয়াদি হেপাটাইটিস অর্থ হলো ৬ মাসের মধ্যে লিভারের প্রদাহ বা হেপাটাইটিস ভাল হয়ে যায়। হেপাটাইটিস A ও E এই ভাইরাস দুটি ৬ মাসের বেশি শরীরে অবস্থান করে না। তবে E ভাইরাস লিভার ট্রানসপ্লান্ট ও শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা ব্যাপক ভাবে হ্রাস পেলে রোগীদের দীর্ঘ মেয়াদি E হেপাটাইটিস হতে পারে। হেপাটাইটিস B ও C আক্রান্তদের অধিকাংশ দীর্ঘ মেয়াদি বা ক্রনিক হেপাটাইটিস রোগে রুপ নেয় অর্থাৎ ৬ মাস পরেও রক্তে এই দুই ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে এবং লিভার কে ক্ষতিগ্রস্থ করতে থাকে। উপরে উল্লেখিত ভাইরাস গুলি রক্তে প্রবেশের
একটি নির্দিষ্ট সময় পর লিভারের হেপাটাইটিস বা প্রদাহ সৃষ্টি করে। ফলশ্রুতিতে জ্বর,বমি বমি ভাব, হলুদ চোখ ও হলুদ প্রসাব ক্ষুদা মন্দা,পেটে ব্যাথা, দুর্বলতা,ওজন কমা,মাংস পেশী ও শরীরের বিভিন্ন গিরায় ব্যাথা হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে জন্ডিস না হয়েও লিভারের ALT, AST বাড়তে পারে এবং একিউট হেপাটাইটিসের রোগ লক্ষন দেখা দিতে পারে।
এই অবস্থাকে একিউট anicteric hepatitis বলে । নাক দিয়ে রক্ত পড়া, রাতে ঘুম না হয়ে দিনে হওয়া, তন্দ্রালু ভাব , আবল তাবল বলা ও অস্থিরতা লিভার ফেলুইউর এর অগ্রিম সংকেত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে জরুরী ভাবে লিভার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
অধিকাংশ রোগী বিশ্রামে সুস্থ হয়ে ওঠে। কিছু রোগীর জন্ডিস দীর্ঘস্থায়ী হয়। এক্ষেত্রে ক্রমশ জন্ডিস বাড়তে থাকে গায়ে চুলকানি দেখা দেয়। পায়খানা রং সাদাটে হয়। খুব আল্প সংখ্যক রোগী লিভার ফেলুইউর হয়ে মারা যায়।
আগেই উল্লেখ্য করেছি হেপাটাইটিস B ও C রোগীদের বড় অংশ দীর্ঘ মেয়াদি বা ক্রনিক হেপাটাইটিস রোগের আক্রান্ত হন (visit my website profmahbubhkhan.com)। গর্ভবতি মায়েরা যদি গর্ভধারনের শেষ ৩ মাসের সময় E ভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত হয় তাহলে প্রায় ২০-২৫% লিভার ফেলুইউর হয়ে মৃতু মুখে পতিত হবে। এজন্য গর্ভবতিরা E ভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত হলে লিভার বিশেষজ্ঞের তত্বাবধানে থাকতে হবে।
ভাইরাল হেপাটাইটি নির্ণয় করতে প্রাথমিক পর্যায়ে লিভার ফাংশন টেস্ট করা হয়। রক্তের লিভার ফাংশন টেষ্ট, ALT, AST, Alkaline phosphatase, Bilirubin, ইত্যাদি। পরবর্তীতে রোগের তীব্রতা পরীক্ষার জন্য PT &Creatinine সহ আরও কিছু পরীক্ষা দরকার হতে পারে যাদ্বারা লিভারের ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা যেতে পারে। একই সময় নির্দিষ্ট ভাইরাস সনাক্ত করতে ABCED ভাইরাসের Serology করাতে হবে।
একিউট ভাইরাল হেপাটাইটিস নির্ণয়ে আল্ট্রাসাউন্ড ও সিটি স্ক্যান পরীক্ষাগুলির তেমন কোন ভূমিকা নেই। বিশেষ ক্ষেত্রে এগুলি
অপ্রত্যাশিত সার্জিকাল কারণগুলি বাদ দিতে ব্যবহৃত হয়। আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষায় পিত্তথলির wall thickened দেখা যেতে পারে যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিপজ্জনক নয়।
Prof. Dr. Mahbub H Khan MBBS, PhD-Liver Med (Sydney) DSM (Vienna) Website: www.profmahbubhkhan.com Mobile 01911356298