Russian এবং Spanish Flu মহামারী হয়ে COVID-19: ১৩০ বৎসররের নিরীক্ষা এবং শিক্ষা
ফুলু (Flu) অথবা ইনফুলুয়েঞ্জা, ভাইরাস দ্বারা সংক্রামক একটি রোগ । এই ইনফুলুয়েঞ্জা ভাইরাস নাক,গলা এবং ফুসফুসের মিউকোসাকে আক্রমণ করে মানুষকে অসুস্থ করে। ফলস্বরূপ রোগীদের হাঁচি, নাক দিয়ে পানি পড়া,কাশি,গলা ব্যথা, শারীর ও মাথা ব্যথা,জ্বর এবং কখনও কখনও নিউমোনিয়া হয়। সাধারণত Type A , B দুই ধরণের ইনফুলুয়েঞ্জা ভাইরাস মানুষকে আক্রান্ত করে । ১৯৩৩ সালে প্রথম এই ভাইরাস সনাক্ত করা হয়। আমরা ইনফুলুয়েঞ্জা সাধারণত একটি সাধারণ রোগ হিসাবে ধারণা করি। তবে সত্যিই, এটি সত্য নয়, কারণ WHO প্রদত্ত হিসাব অনুযায়ী প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী ২.৫ -৫ লক্ষ মানুষ সাধারণ মৌসুমী ফুলুতে ( Sesonal Flu ) মারা যায। তবে ইনফুলুয়েঞ্জা মহামারীতে মৃত্যুর হার অভাবনীয়। Flu মহামারী খুব কমই ঘটে। মহামারীটি তখন ঘটে যখন ইনফুলুয়েঞ্জা A ভাইরাসের একটি নতুন strain প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে সঞ্চারনের মাধ্যমে আবির্ভাব হয়ে মানুষকে সংক্রমণ করে । এই Novel Strain ইনফুলুয়েঞ্জা পুরানো Strain সৃস্ট কোনও রকম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্বারা প্রভাবিত হয় না এবং খুব অল্প সময়েই অনেক লোকের মধ্যে রোগের সৃস্টি করে। ফলস্বরূপ ভাইরাসটি বিশ্বের এক অংশ থেকে অন্য অংশে ছড়িয়ে মহামারী সৃষ্টি করে। ১৫১০ সালে (৫১০ বৎসর আগে) প্রথম Flu মহামারী দেখা দেয়। বিজ্ঞানীদের মতে প্রতি. ৩৮ বৎসর পর পর পৃথিবীর বুকে একটা Flu মহামারীর আবির্ভাব হয়। গত ১৪০ বৎসরে কমপক্ষে পাঁচটি Flu মহামারী বিশ্বকে নাস্তা নাবুদ করে দেয় ।
১৮৮৯ সালে ১৯ শতকের সবচেয়ে মারাত্মক Flu মহামারীটি “Asiatic” or “Russian” মহামারী হিসাবে পরিচিত। এই মহামারীটির উত্স রাশিয়ার BUKHARA1 বিশ্বব্যাপী ৩০০-৯০০ মিলিয়ন মানুষ সংক্রামিত হয়েছিল। ১ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু ঘটানোর পর মারাত্মক এই মহামারিটি ১৯৯০ সালে শেষ হয়েছিল । মহামারীর তীব্রতা স্তর ছিল ২। যদিও প্রাথমিক আক্রমণের পরেও কয়েক বছর বেশ কয়েকটি পুনরাবৃত্তি লক্ষ্য করা গিয়েছিল । রাশিয়ান জার, বেলজিয়ান রাজা এবং জার্মানির সম্রাট সকলেই এই মহামারীতে আক্রান্ত হয়েছিল। ইনফ্লুয়েঞ্জা A ভাইরাসের H2N2 subtype এর উত্তরসূরি H3N8 মহামারিটি ঘটানোর জন্য দায়ী।
তবে জানুয়ারী ১৯১৮ এর স্প্যানিশ Flu টি মৃত্যুর রেকর্ড তৈরি করে বড় ট্র্যাজেডি হিসাবে ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে। । নিম্নের বর্ণিত Flu মহামারীগুলির ব্যাপকতা, ক্ষতি এবং মৃত্যুর সংখ্যা সব সময় পৃথিবীর মানুষের স্মৃতির কোঠায় ঘুরতে থাকবে । বিপর্যয়কারী একটা চলমান বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার প্রায় ১১ মাস আগে যুদ্ধের মৃত্যু ও ধ্বংসর সঙ্গে যুক্ত হয় আর একটা প্রলয়ংকারী Flu মহামারী । ইনফুলুয়েঞ্জা A ভাইরাস H1N1 Subtype এই মহামারী সৃষ্টি করে। মারাত্মক এই ভাইরাল অসুস্থতা শুরু হয় ১৯১৮ জানুয়ারিতে, যেটি স্প্যানিশ Flu মহামারী নামে পরিচিতি পায় । যদিও এই অসুস্থতার উত্স পরিষ্কার নয় তবে অনেক বিশ্বাস করে এটি US সেনা ঘাঁটি Fort Riley, কানসাস থেকে ছড়িয়ে পড়ে । ১৯২০ সালের ডিসেম্বর মাসে Flu র তান্ডব শেষ হয়। মহামারীর তীব্রতা স্তর ছিল ৫। তিন বছরে তিনটি Wave (ইনফুলুয়েঞ্জা প্রাদুর্ভাবের পুনরাবৃতিতে) পৃথিবীর তৎকালীন জন সংখ্যার এক তৃতীয়াংশ এই ভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত হয় এবং কমপক্ষে ৫ কোটি (৩-১০ কোটি) মানুষ মারা যায়। বিতর্কিত মৃত্যুর পরিসংখ্যানটি কারণ সেনাবাহিনীর মনোবল বজায় রাখার জন্য USA এবং অনেক ইউরোপীয় দেশ দ্বারা মৃত্যুর অপ্রতুল পরিসংখ্যান প্রকাশ করা। এ ছাড়াও অনেক দেশ কর্তৃক যথাযথ মৃত্যুর নিবন্ধনের অভাব। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ স্প্যানিশ Flu দিয়ে অল্প বা বেশি সংক্রামিত হয়েছিল এবং মৃত্যুর হারও ছিলো অনেক । আমেরিকার ১০৫ মিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে ২৮% সংক্রামিত হয় এবং ৫০০০০০-৮৫০০০০ মারা যায়। স্প্যানিশ ইনফুলুয়েঞ্জা অংশ “Bombay influenza” আক্রাত হয়ে ১২-১৭ মিলিয়ন ভারতবর্ষের মানুষের মৃত্যু ঘটেছিল । এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে মহাত্মা গান্ধীও এ রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন । মরার মিছিল এত বিশাল ছিলো যে কাঠ অভাবে শবদাহ করা সম্ভব ছিলনা। যার ফলে মৃতদেহগুলি নদীগুলিতে নিক্ষেপ করা হতো। গঙ্গা এবং সারা দেশের
অন্যান্য নদীতে ভাসমান ফুলাফাফা দেহগুলির বোঝাই থাকার দৃশ্য ছিল বিভীষিকাময় । এই সময় অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ ও Flu ভ্যাকসিন তো দূরের কথা তখনও কোন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার হয়নি। এখানে উল্লেখ্য যে ১৯২৮ সালে Penicillin এবং ১৯৩৫ সলে Sulphonamide আবিস্কার হয় । ১৯৩৬ সালে ফ্লু Monovalent ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয় এবং ১৯৪৫ সালে US সেনাবাহিনীতে ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত হয়। অনেক গবেষকের মতে একেতো ভ্যাকসিনের অভাব তার উপরে যুদ্ধ জনিত অপুষ্টি, অ্যান্টিবায়োটিকের অভাবে ভাইরাল ইনফেকশনের উপর ব্যাকটেরিয়াল সংশ্লিষ্ট নিউমোনিয়া চিকিৎসা করতে না পারা, বিশ্বব্যাপী মৃত্যু বাড়ার কারণ গুলোর অন্যতম। এছাড়াও উচ্চ মাত্রায় Aspirin ব্যবহার করার ফলে মারাত্বক রোগ Reye syndome স্প্যানিশ Flu তে মৃত্যুর হার বাড়িয়ে দিয়েছিল । এই মহামারীতে কম বয়স্কদের (২০- ৪০ বছর) মৃত্যু হার ছিল বেশি । কিছু গবেষক বিশ্বাস করেন যে কম বয়সী মানুষদের বেশি মৃত্যুর হার Cytokines storm জনিত হতে পারে। ১৯৫৭ সালে বিশ্বব্যাপী আরও একটি ইনফুলুয়েঞ্জা মহামারী দেখা দেয় যাকে “Asian Flu” হিসাবে নামকরণ করা হয় । উৎপত্তি স্থান চীনের Guizhou থেকে।
ইনফ্লুয়েঞ্জা A ভাইরাসের H2N2 subtype এই মহামারী সঙ্গে যুক্ত ছিল । মহামারীর তীব্রতা স্তর ছিল ২। এই মহামারীতে ৫০০ মিলিয়নের বেশি মানুষ সংক্রামিত হয়েছিল। প্রায় ১-৪ মিলিয়ন ভুক্তভোগীর মৃত্যু হয়েছে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মারা যাওয়ার সংখ্যা প্রায় ১১৬ ০০০ ।
তীব্রতার দিক দিয়ে এশিয়ান Flu স্প্যানিশ Flu তুলনায় মধ্যম মানের, তবে ২০০৯ সালের মহামারীর তুলনায় ১০ গুন্ বেশি মারাত্মক ছিল। তবে ভ্যাকসিন এবং অ্যান্টিবায়োটিক বদৌলতে সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার কমে যায়। তা না হলে এই মহামারীর ব্যাপকতা স্প্যানিশ ফ্লুকে টপকে যেতে পারতো।
১৯৬৮ সালে Hong Kong থেকে ইনফুলুয়েঞ্জা A H3N2 Subtype ভাইরাস দিয়ে আরও একটি ফ্লু মহামারী শুরু হয় যেটি “Hong Kong“ Flu হিসাবে পরিচিত হয় । ভাইরাসটি সম্ভবত চীনের মূল ভূমি থেকে উৎপত্তি হয়ে Hong Kong এবং অন্যান্ন পার্শ্ববর্তী দেশগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে। এটি ভিয়েতনাম থেকে ফিরিয়ে আনা আমেরিকান সেনাবাহিনীর মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়ে। মহামারীর তীব্রতা স্তর ছিল ২। বিশ্বব্যাপী ৫০০ মিলিয়নেরও বেশি সংক্রামিত হয়েছিল এবং ১-৪ মিলিয়ন মারা যায় । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক লক্ষ লোক মারা গিয়েছিল । “Hong Kong“ Flu দিয়ে মৃত্যুর হার অপেক্ষাকৃত ভাবে কম ছিল । ১৯৫৭ সালের “Asian Flu” মহামারী বিরুদ্ধে প্রাপ্ত রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বজায়, উন্নত চিকিত্সা যত্ন, অ্যান্টিবায়োটিকের সহজলভ্যতা কম মৃত্যুর কারণ হিসাবে চিন্নিত করা হয় ।
Novel A subtype H1N1 09 নামের নতুন একটি ইনফুলুয়েঞ্জা ভাইরাস ২০০৯ সালে Swine Flu মহামারীটির জন্য দায়ী। এই মহামারীর তীব্রতা স্তর ছিল ১। স্প্যানিশ Flu মহামারীর পরে H1N1 subtype দ্বারা সৃষ্ট এটি ২য় মহামারী। এই Swine Flu ভাইরাসটি Mexico প্রথম সংক্রামিত করার পর সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এটি মহামারীর সময়ে প্রচলিত H1N1 subtype টির থেকে খুব আলাদা ছিল। এটি দেখা গিয়েছিল যে ৬০ বছর উপরে ১/৩ অংশ লোকের পূর্বের সৃষ্ট অ্যান্টিবডি কার্যকর ছিল। বিশ্বব্যাপী প্রমাণিত সংক্রামিত মানুষের সংখ্যা মোট সংখ্যা ছিল ১.৬ মিলিয়ন তবে আসল সংখ্যাটি আরো বেশি (৭০০ মিলিয়ন – ১.৪ বিলিয়ন ) হতে পারে বলে গবেষকরা বিশ্বাস করেন। বিশ্বব্যাপী মৃত্যু হয়েছিল ১৫১৭০০-৫৭৫৪০০ । মৃতদের মধ্যে ৬০-৮৫% লোক ৬০ বসরের নিচে ছিলেন। অন্যদিকে CDC তথ্য অনুযায়ী এপ্রিল ১২ ,২০০৯ এপ্রিল ১০, ২০১০ মধ্যে ৬০.৮ মিলিয়ন মার্কিনি আক্রান্ত হয় এবং ১২৪০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল । অনেক রোগীদের অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিত্সা করা হয়েছিল। লক্ষণগুলির ৪৮ ঘন্টার মধ্যে antiviral দিয়ে ভাল ফলাফল পাওয়া গিয়েছিলো বলে দাবি করলেও পরবতীতে metaanalysis তা পরিপূণভাবে প্রমাণিত হয়নি ।
Covid-19 একটি সম্পূর্ণ নুতুন অসুখ । ইনফুলুয়েঞ্জা A ভাইরাসের Corona ফ্যামিলির অন্তর্গত SARS CoV-2 নামের Strain এ অসুখের জন্য দায়ী। ১৯ সালের December মাসে চীনের উহানে একটি পশু পাখির বাজারে থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার প্রথম সংবাদ প্রচার হয়।
এই মহামারীর তীব্রতা স্তর ৩ । ভাইরাসটি আবিস্কারের পর থেকে এ পর্যন্ত (৩-৫-২০), বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩৫০৭৪৪২ লক্ষ লোক Covid-19 আক্রান্ত । এর মাঝে ২৪৫২৪১ লোক মৃত্যুবরণ করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা ছিল ৬৭৪৯২। কমিউনিটিতে ভাইরসের পরীক্ষা ব্যাপক ভাবে প্রয়োগ হলে এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে অনেকের ধারণা। এই মহামারির অবস্থায়
চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এই ভাইরাসকে কার্যকার ভাবে ঠেকানোর জন্য চেষ্টায় লিপ্ত। সংক্রমক রোগ প্রতিরোধ করার জন্য সংক্রামণের পন্থাগুলি নির্ণয় করে সংক্রমণ ঠেকানোর একটা বড় উপায়। এই পদ্ধতিতে প্রচলিত “স্বাস্থ্য ও অন্যান্য বিধি” অবলম্বনে বিশ্বের উন্নত অন্নুন্ত সব দেশ রোগ প্রতিরোধে বাবস্থা করে যাচ্ছে।
পূর্বের ইনফুলুয়েঞ্জা মহামারীগুলি এত মারাত্মক ছিল যে মহামারীগুলীর সঙ্গে AIDS মহামারি ও দুটি বিশ্বযুদ্ধ এর মৃত্যুর তুলনামুলক পার্থক্য দেখলে বুঝা যায় কত ভয়ঙ্কর ছিল Flu আক্রমণগুলি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ২০ মিলিয়ন সামরিক ও বেসামরিক লোক মারা যায়। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ৭০-৮৫ মিলিয়ন সামরিক ও বেসামরিক লোক মারা গিয়েছিল, তৎকালীন বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ৩% । ১৯৮১ সালে AIDS মহামারী শুরু হওয়ার পর ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৭৫ মিলিয়ন HIV ভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত হয়, এর মধ্যে ৩২ মিলিয়ন মারা যায় । Covid-19 মহামারী যোগ না করেও ২০০৯ সাল পর্যন্ত সমস্ত Flu মহামারীর সংযুক্ত মৃত্যু সম্মিলিত দুটি মহাযুদ্ধ এবং AIDS মৃত্যুর চেয়ে অনেক বেশি। এই মহামারীগুলো যুগে যুগে আল্লাহ প্রদত্ত পাপের শাস্তি হিসাবে মানবজাতির উপর পৃথিবীতে নেমে আসে যেন মানুষ তা দেখে শিক্ষা গ্রহণ করে। মানুষ তার ক্ষমতা দিয়ে যত না ক্ষতি পৃথিবীকে করতে পারে আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবাণু দিয়ে তৈরী ক্ষতি কত না অনন্য । বিশ্বাসীদের জন্য যুগে যুগে মহামারী
গুলো তারই নিদর্শন হয়ে থাকবে ।
মহামারীগুলি বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের অনেক দিক নির্দশনা ও শিক্ষা পাওয়া যাবে। মহামারীগুলি একটি থেকে অন্যটি বিভিন্ন দিক থেকে পৃথক ছিল। WHO হিসাব অনুযায়ী মার্চ মাসের ৩ তারিখ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে Covid-19 অসুখে মত্যুর হার(৩.৪% ) যা স্প্যানিশ Flu মত্যুর হারের (৩-১০%) তুলনায় কম। স্প্যানিশ Flu এত মারাত্মক ছিল যে মানুষেরা অসুস্থ হয়ে সকালে জেগে উঠে কাজে যাওয়ার পথে মারা গিয়েছিল। আলাস্কার একটি ছোট্ট গ্রামে ৮০ জন বয়স্ক বাসিন্দাদের মধ্যে ৭২ জন ব্যক্তি সংক্রামিত হওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে মারা গিয়েছিলেন।
বিধ্বংসী যুদ্ধের কারণে প্রথমে স্প্যানিশ Flu তেমন কোনো গুরুত্ব পায়নি। যুদ্ধের সময় এক জায়গায় থেকে অন্য স্থানে বিশাল সৈন্যবাহিনী চলাচলও এই রোগের দ্রুত প্রসারকে যুক্ত করেছিল। তবে সামাজিক দূরত্ব বজায়,ব্যক্তিগত সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ,বিচ্ছিন্নতা,করেন্টাইন এবং জনসমাগম এড়ানো পন্থাগুলি ব্যবহার করে স্প্যানিশ Flu র বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে। যেমন আগে উদ্ধৃত করা হয়েছে যে তখন পর্যন্ত কোনও অ্যান্টিবায়োটিক বা এন্টিভাইরাল Spanish Flu চিকিত্সার জন্য আবিষ্কার হয়নি । তবে পরবর্তী মহামারীতে Flu Vaccine মৃত্যুর হার হ্রাস করতে সহায়তা করেছে। এছাড়াও লকডাউন, ভ্রমণ বিধিনিষেধ সহ জনস্বাস্থ্যের আরও উন্নতিসাধন সাম্প্রতিক মহামারী নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করেছে।
Covid- 19 রোগের পরীক্ষার কেদ্রগুলি দেশ ব্যাপী চালু করা দরকার। নির্ভরযোগ্য PCR সুবিধাসহ বেসরকারী আধুনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলির অনুমতি দেয়া উচিত। সরকার সব একা করতে পারবে না । পরীক্ষাগুলি সস্তা এবং অন্যান্য পরীক্ষাগুলির মতো সহজলভ্য হওয়া উচিত যেন মানুষ চিকিত্সকের পরামর্শে অথবা নিজের ইচ্ছা মতো নিজেদের খরচে করতে পারে।
জনগণ বর্তমান এবং অতীতে Covid-19 সংক্রামিত হয়েছে কিনা সেটি জানার জন্য PCR test এর সাথে Quantitative অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করাতে হবে। প্রটেকটিভ মাত্রায় অ্যান্টিবডি লেভেল রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ করে এবং এই মানুষগুলো বিভিন্ন ভাবে ম্প্রদায়ের জন্য আশীর্বাদ বহন করবে । বর্তমানে বিশ্বের কয়েকটি দেশে ভালো হয়ে উঠা রোগীর প্লাজমা (antibody) দিয়ে Covid -19 রোগীদের চিকিৎসা ভাল ফলাফল পেয়েছে বলে দাবি করেছে ।
সুতরাং যতদিন না পর্যন্ত কোনো কার্যকারী ওষুধ ও ভ্যাকসিন না পাওয়া যায় ততোদিন পর্যন্ত এই রোগীদের প্লাজমা Covid রোগীদের চিকিত্সার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এন্টিবডির মাত্রা ও ভাইরাসগুলির বিশদ চরিত্রগত বৈশিষ্ট নির্ণয় করে এপিডেমিওলজিকাল তথ্য উপাত্ত ভিত্তিক তথ্যশালা তৈরি করে ফিউচার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রমের প্ল্যান
করতে হবে ।www.whereindoctor.com
পূর্বের মহামারীগুলো পর্যলোচনা করে দেখা যায় যে মহামারীগুলি ১-৩ বৎসর পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হয়ে পরপর কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন ওয়েব মানুষকে সংক্রামিত করেছিল । সম্প্রতি দেখা গেছে অসুখ ভালো হওয়ার পরও একই সংক্রামিত রোগী কয়েকবার পুনরায় সাক্রামিত হয়। সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণে আরও দেখা গেছে যে ৭০% পর্যন্ত রোগীর কোনো রকম রোগ লক্ষণ থাকে না । ফলে এই বাক্তিরা সমাজে Covid সংক্রমনের ভান্ডার হিসেবে কাজ করবে ও রোগ ছড়িয়ে পড়তে থাকবে। আমরা এখনো জানি না কোভিড -19 সমাজে কত দিন থাকবে এবং এই ভাইরাসটি কীভাবে শেষ হবে। কারণ Covid-১৯ অসুখ সংক্রান্ত অনেক কিছু তথ্য জানার দরকার। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে Aspirin ইনফ্লুয়েঞ্জায় মৃত্যুর হার বাড়িয়ে তোলে। তাই Covid-19 অসুখে Aspirin খাওয়ার ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত, বিশেষ করে যারা নিয়মিত ব্যবহার করছেন। কার্যকর ওষুধ এবং ভ্যাকসিন না পাওয়া অবধি কঠোর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে সামাজিক দূরত্ব,ব্যক্তিগত সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ,বিচ্ছিন্নতা,করেন্টাইন এবং জনসমাগম এড়ানো ও ভ্রমণ সীমাবদ্ধতা Covid Flu বিরুদ্ধে লড়াইয়ের উত্তম উপায়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় অনেকে এই বিষয়গুলো অনুসরণ না করে দেশের মানুষের ক্ষতি সাধন করে চলেছে ।
ভবিষ্যতে ইনফ্লুঞ্জার নিয়মিত Survillance ব্যাবস্থার মাধ্যমে Novel ইন্ফুলুএন্জা ভাইরাসকে চিন্নিত করে ব্যাবস্থা নিতে পারলে মহামারীর প্রকোপ থেকে মুক্ত থাকার সম্ভাবনা অনেক । এই ব্যাপার আমরা WHO পরামর্শ এবং লজিস্টিক সাহায্য নিতে পারি।
Prof. Dr. Mahbub H Khan
লেখক: প্রফেসর মাহবুব এইচ খান
লিভার ও গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিশেষজ্ঞ