হেপাটাইটিস বি রোগের কার্যকর চিকিৎসা আছে
হেপাটাইটিস বি রোগের কার্যকর চিকিৎসা আছে
দীর্ঘমেয়াদি হেপাটাইটিস বি একটি মারাত্মক লিভার অসুখ। বাংলাদেশে ২-৬.৫% পর্যন্ত মানুষ দীর্ঘমেয়াদি ভাবে এই রোগের জীবাণু বহন করে। বহনকারি ৭০-৮০ ভাগ রোগীর লিভারের দীর্ঘমেয়াদি কোন সমস্যা সৃষ্টি করে না। কিন্তু রোগীদের জীবদ্দশায় ২০-২৫ ভাগ রোগী ২০-২৫ বৎসরের মধ্যে লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যানসার সহ অন্যান্য লিভার জনীত জটিল সমস্যায় পতিত হয়। আক্রান্তদের মাত্র ১০% রোগী তাদের শরীরে বি ভাইরাসের উপস্তিতির ব্যাপারে অবহিত। সুতরাং নিজের অজান্তে অধিকাংশ রোগী রোগে ভোগেন এবং রোগের শেষপর্যয়ে পৌঁছেন।
Stages of Liver stiffness (Fibrosis)
হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের চিকিৎসা আছে তাহা অধিকাংশ রোগী এমনকি পাশ করা অনেক ডাক্তারদেরও অজানা। হেপাটাইটিস বি চিকিৎসার মূখ্য উদ্দেশ্য হল রক্ত থেকে বি ভাইরাসের HBsAg মুক্ত করা এবং একই সাথে লিভারের মধ্যে HBs Ag এর পারটিকেল (ccc DNA) মুক্ত করা। এছাড়াও লিভারের ক্ষত কমানো ও লিভার রোগের গতিকে কমানো বা বন্ধ করা। সর্বোপরি লিভার সিরোসিস, ক্যানসার ও লিভার ফেলুইউর থেকে পরিত্রাণ পেতে সাহায্য করা । হতাশা জনক হলেও এটা সত্যি যে চিকিৎসা কার্যকর হওয়ার পরও মাত্র ২-৫% রোগীর রক্ত থেকে HBsAg চলে যায়। বর্তমান বিশ্বে যেসব ঔষধ দিয়ে বি ভাইরাসের চিকিৎসা করা হয় এগুলো এব্যাপারে কোন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেনি তবে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস কে বাড়ন্ত ও কার্যকর থেকে সুপ্ত ও অকার্যকর অবস্থায় ফেরাতে পারাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা হেপাটাইটিস বি রোগের মুক্তি হিসেবে দেখেন। এই অবস্থান লিভারের ক্ষতকে শুকিয়ে তোলে। অসুখের অগ্রগতি কমায় ও অনেক ক্ষেত্রে বন্ধ করে দেয়। এইসব অবস্থানের ফলে লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যানসার ও ফেলুইউর হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যেমে ২০-৪০ ভাগ রোগীর রোগ মুক্ত হন।
বিশ্বজুড়ে বর্তমানে বেশ কয়েকটি ঔষধ হেপাটাইটিস বি চিকিৎসার জন্য ব্যাবহার হচ্ছে। এর মধ্যে পেগ ইন্টারফেরন ইঞ্জেকশন উল্লেখ্য। যেটা ৯০ দশকের শেষ দিক শুরু হয়। ৬ মাস চিকিৎসার ফলে ৪০ ভাগ পর্যন্ত রোগী রোগমুক্ত হন, তবে বেশি দিনের চিকিৎসা বেশি রোগী ভালো হয়। এই চিকিৎসা অনেক খরচের এবং পার্শপ্রতিক্রিয়াও বেশি, তবে সহনীয়। প্রতি সাপ্তাহে দেশী ও বিদেশী ঔষধ কোম্পানির ঔষধ ভেদে ৮-১৮ হাজার টাকা খরচ হয়। এই চিকিৎসার বেশ কিছু দিন পর ল্যামিডুন্ডিন নামে একটা খাওয়ার ঔষধ বাজারে আসে । যদিও এই ট্যাবলেট এর কার্যকারিতা ইঞ্জেকশনের অর্ধেকের মত তবুও দামে সস্তা ও পাশ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক কম। প্রাথমিক ভাবে রোগীদের মনে আশার সনচয় করলেও পরবর্তীতে দেখা হলে এই ঔষধ দীর্ঘ দিন ব্যাবহারের ফলে কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে, যেটা ৫ বৎসরে ৬০-৭০ শতাংশেরও উপরে। ১৯৯৮ সালে সিডনী বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়েষ্টমিড লিভার সেন্টারে ল্যমিভূডিন দিয়ে আমরা চিকিৎসা শুরু করি।পরবর্তীতে বাজারে মুখে খাওয়ার নতুন নতুন ঔষধ চলে আসলো। ওষুধগুলো হচ্ছ এডিফোভির, টেলবিভুডিন, এন্টিকাভিব ও টেনোফভির । এই ঔষধ কার্যকর, ঔষধের কার্যক্ষমতা কমার ভাগ খুবই কম। দীর্ঘ মেয়াদি এসব ঔষধ কিডনী ও হাড়ের সমস্যা করতে পারে। ২০% মত রোগীর এসব চিকিৎসা কার্যকর।


এখানে উল্লেখ্য যে নব্বই দশকের শেষের দিকে মাত্র ৫-১০% রোগী হেপাটাইটিস সি রোগ ভাল হতো। কিন্তু বর্তমানে ৯৫-১০০% রোগীর নতুন নতুন চিকিৎসার ফলে রোগ মুক্ত হয়ে যাচ্ছেন । আমাদের দেশের C ভাইরাসের চিকিৎসা খরচ প্রায় এক পঞ্চমাংশ হয়েছে। অন্য দিকে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের আবিস্কারের ৬৫ বৎসর পার হলেও এ রোগের চিকিৎসায় যুগন্তকারি কোন সাফল্য আসে নি। হেপাটাইটিস C আক্রান্তের চেয়ে হেপাটাইটিস B এর সংখ্যাও অনেক বেশি, প্রায় ২৮৭ মিলিয়ন। হেপাটাইটিস বি এর একটা বড় অংশের চিকিৎসা দেওয়া উপযুক্ত থাকে না।থাকলেও চিকিৎসা সবার উপর কার্যকরি না। এজন্য অনেকে হতাশ হয়ে চিকিৎসা পদ্ধতির সঙ্গে যুক্ত থাকে না। বর্তমানের প্রাপ্ত চিকিৎসার মাধ্যমে যদি লিভারের অবস্থা ভাল রাখা যায় তাহলে অদূব ভবিষ্যৎতে আরও যেসব কার্যকরি অসুধ বাজারে আসবে যাহা দিয়ে চিকিৎসার আরও উন্নত সুযোগ তারা নিতে পারবে। আশার কথা এই যে অষ্ট্রেলিয়ার একদল চিকিৎসাক বিজ্ঞানী বি ভাইরাসের নতুন ঔষধ আবিষ্কারের জন্য ২০০৯ সাল থেকে গবেষণা করে যাচ্ছেন। কাজ অনেক এগিয়ে এসেছে এবং বিজ্ঞানীরা মনে করেন কয়েক বৎসরে এই ঔষধটা বিশ্ব বাজারে ছাড়তে পারবেন। এই ঔষধে বি ভাইরাসের শতভাগ রোগী সুস্থ হয়ে যাবেন বলে আশা করেন

হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের চিকিৎসার পদ্ধতি লিভার বিশেষজ্ঞগন ভালভাবে জানেন। চিকিৎসার জন্য বেশ কয়েকটি গাইড লাইন আছে যেমন আমেরিকান,ইউরোপিয়ান ও এশিয়ান।গাইড লাইন ছাড়া চিকিৎসা করলে হয় চিকিৎসা ভুল অথবা অকার্যকর হবে এবং আর্থিক ও শারিরীক ক্ষতির সম্মুখিন হতে হবে। আমার প্রাকটিসে এমন অনেক রোগী দেখেছি যাহারা গাইড লাইনে পড়েন না যেমন, inactive ভাইরাস, তাদের চিকিৎসা না দেওয়ার ফলে হতাশ হয়ে লিভার বিশেষজ্ঞের সাথে হয় কালে ভদ্রে অথা মোটও যোগাযোগ রাখেন না এবং এমন অনেক রোগীও দেখেছি যোগ্য না থাকায় তারা নিয়মে পড়ে না। চিকিৎসার না দেওয়ার কারনে অথবা চিকিৎসা দেওয়া সত্ত্বেও ঠিকমত চিকিৎসা না করার কারনে লিভারে জটিল অবস্থানে চলে গেছে অথবা মৃত্যু বরন করেছে। সূতরাং প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলেও অথবা চিকিৎসার কার্যকর না হলে প্রতি ৩-৬ মাস পর পর লিভার বিশেষজ্ঞকের সঙ্গে পারামর্শ করবেন যাহাতে সময়মত চিকিৎসা শুরু করার সুযোগ থাকে। আর চিকিৎসা প্রাপ্ত রোগীরা নিয়মিত ভাবে লিভার বিশেষজ্ঞে তত্ববধানে রোগের অবস্থানের ব্যাপারে পরামর্শ নেবেন। এক্ষেত্রে লিভার ক্যানসার ও লিভার ফেলুইউর এর প্রাথমিক অবস্থার নির্নয় করে সুচিকিৎসার ব্যাবস্থা করা যেতে পারে।
বেশি খরচ এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য পেগ ইন্টার ফেরন বেশিদিক চিকিৎসা দেওয়া হয় না। অন্য দিকে মুখে খাওয়ার ট্যাবলেট দীর্ঘ মেয়াদি ব্যাবহার করার পর একাংশের লিভার কে সুস্থ রাখা যায়। অনেক চিকিৎসা বিজ্ঞানী আজকাল মনে করেন ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্ত চাপের মত সারাজীবন ওষুধ খাওয়া যতক্ষন না পর্যন্ত ওষুধ বন্ধ করার মত উন্নতি সৃষ্টি হয়
6.উপরোক্ত আলোচনায় এটা পরিস্কার যে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাথে জড়িত সব চিকিৎসক ও বি ভাইরাসে আক্রান্তরা জানতে হবে বি ভাইরাসের কার্যকর চিকিৎসা আছে। ভাইরাসে আক্রান্তের এক অংশ চিকিৎসার রোগ মুক্ত হয়। চিকিৎসার কার্যকর হলে লিভার সিরোসিস থেকে একাংশের লিভার স্বাভাবিক হয়ে আসে যাহা চিকিৎসা গবেষণায় প্রমানিত।লিভার ক্যানসার লিভার ফেলুইউরের সম্ভাবনা কমে আসে। প্রাথমিক অবস্থায় লিভার ক্যানসার ও লিভার ফেলুইউরের মত অবস্থান ধরা পড়লে তার সুচিকিৎসার ব্যাবস্থা করা হয়। মোট কথা বি ভাইরাসে আক্রান্তের লিভার বিশেষজ্ঞ নিয়মিত তত্ববধানে থাকতে হবে। তাই চিকিৎসা দেওয়া যাক বা না যাক বা চিকিৎসা কার্যকর হোক বা না হোক।
Prof. Dr. Mahbub H Khan MBBS, PhD-Liver Med (Sydney) DSM (Vienna) Website: www.profmahbubhkhan.com Mobile 01911356298