হেলিকোব্যাকটার আক্রান্তের রোগ লক্ষন, পরীক্ষা ও চিকিৎসা
হেলিকোব্যাকটার আক্রান্তের রোগ লক্ষন, পরীক্ষা ও চিকিৎসা
বিভিন্ন দেশে গবেষণায় উঠে এসেছে যে বয়স বাড়ার সাথে হেলিকোব্যাকটারের আক্রান্তদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। আক্রান্তদের শতকরা ৮৫ ভাগের মধ্যে কোন ধরনের রোগ লক্ষন ত্ত উপসর্গ দেখা দেয় না। যাদের মধ্যে রোগ লক্ষন দেখা দেয় তারা পেটে ব্যাথা, পেটে বুকে জালা,ক্ষুদামন্দা,বমি বমি ভাব,বমি, পেটফুলা অনুভব হওয়া, ঘন ঘন ঢেকুর উঠা হতে পারে। কিন্তু রক্তবমি, কালপায়খানা,গলায় খাবার বাধা ও ওজন কমা আলসার জনিত অথবা ক্যানসার জনিত সমস্যা নির্দেশনা করে। এছাড়াও অনেকে রক্তশূন্যতা,ডায়ারিয়া ও মুখে দুর্গন্ধসহ আরও অনেক সমস্যা ভুগতে পারে।
রোগ লক্ষন ও উপসর্গ প্রকাশ পেলে হেলিকোব্যাকটার পাইলোরির পরীক্ষা করা হয়। এইগুলোর মধ্যে হেলিকোব্যাকটারের জীবানুর এন্টিবডি নির্ণয়, urea breath test ও পায়খানার মধ্যে হেলিকোব্যাকটারের এন্টিজেন সনাক্তকরণ উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া এন্ডোসকপির মাধ্যমে পাকস্থলীর মিউকসাল বায়োপসি করে ও হিসটোলজির বিশেষ Stain এর মাধ্যমে হেলিকোব্যাকটার দেখা যায়। জীবানু কালচার করে ত্ত হেলিকোব্যাকটার নির্নয় করা হয়। বায়োপসির টিসু থেকে রেপিড Urease test বা CLO টেষ্ট করা হয় যেটা ২০ –৩০ মিনিটের মধ্যে জীবানুর উপস্থিতি ধরতে পারে। তবে আরও ইতিবাচক এবং কার্যকর ফলাফল আসতে ২৪ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। হেলিকোব্যাকটার পাইলোরির এই পরীক্ষাটি বিভিন্ন কারনে অন্যান্য অনেক পরীক্ষার তুলনায় ব্যাকটেরিয়া উপস্থিতি সনাক্ত করতে সক্ষমতা অপেক্ষাকৃত কম। এই জন্য, কিছুটা ব্যয়বহুল থাকা সত্ত্বেও urea breath test কমবেশি সহজলভ্য এবং আরো কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। তবুও নিত্যদিনের প্রাকটিসে হেলিকোব্যাকটারের এন্টিবডি টেষ্টটা বেশি ভাগে করা হয়। এটা দামেও সস্তা এবং সহজলভ্য তাই চিকিৎগন এই টেষ্টটি বেশি করান। আলসার জনিত সমস্যা থাকলে গ্যাস্ট্রো এন্টারোলজিস্টগন যখন এন্ডোসকপি করেন তখন প্রয়োজন হলে একই সাথে গ্যাষ্ট্রিক বায়োপসি টিসু দিয়ে CLO টেষ্ট করেন।
এছাড়াও হেলিকোব্যাকটর জনিত বিভিন্ন রোগ নির্ণয় করতে অনেক ক্ষেত্রে এন্ডোসকপি করা হয়। বিশেষ করে পাকস্থলীর আলসার, ক্যানসার, রক্তবমি ও খাদ্যনালী অবষ্ট্রাকশনের লক্ষন যদি থাকে। এসব রোগ গুলির নির্নয়ে এন্ডোসকপ মুখের ভিতর দিয়ে প্রবেশ করানো হয়। যাওয়ার পথে খাদ্যনালী,পাকস্থলীর ও ডিওডেনামের অংশ বিশেষ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষাটি নিরাপদ। আজকাল আমরা ঘুম পাড়িয়ে আথবা অজ্ঞান করার মাধ্যেমে এই পরীক্ষাটি করি।
তবে উন্নত দেশে সব সেন্টারে অ্যানেশথেসিয়া দিয়ে অজ্ঞান করলেও আমাদের দেশে হাতে গোনা কয়েকটি সেন্টারে অজ্ঞান করে এন্ডোসকপি করা হয়। এই পরীক্ষটি রোগীর হেলিকোব্যাকটার জনিত অন্যান্য উপসর্গ যেমন পাকস্থলীর ক্যানসার ও MALT LYMPHOMA ইত্যাদির জন্য অতি কার্যকর। বিশেষ ক্ষেত্রে CT MRI করানো হয়।
অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া চিকিৎসার মত এন্টিবায়োটিক প্রয়োগে হেলিকোব্যাকটার চিকিৎসা করা হয়। পেপটিক আলসালরে প্রটোন পাম্প ইনহিবিটর (PPI) সাথে ২–৩ টা এন্টিবায়োটিক সংযোগে ৭–১৪ দিন হেলিকোব্যাকটার চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে নিত্যদিনের প্রাকটিসে খুব বেশি কার্যকর কয়েকটি পন্থায় চিকিৎসা দেওয়া হয়। এন্টিবায়োটিক অকার্যকর হওয়ার জন্য অনেক ক্ষেত্রে হেলিকোব্যাকটারের চিকিৎসার সুফল আনে না এবং চিকিৎসা কষ্টসাধ্য ও ব্যায় বহুল হয়ে উঠে।
বিশেষ করে এন্টিবায়োটিক রেসিসট্যান্ট নির্নয় করে যদি চিকিৎসার প্রয়োজন হয় । চিকিৎসা কার্যকর হলে রেজিম বিশেষ ৭০–৯৪% মানুষ হেলিকোব্যাকটারের জীবানু থেকে মুক্তি পায়। এটা অবশ্য জানা দরকার যে চিকিৎসা কার্যকর হওয়ার পর আবার নতুন করে হেলিকোব্যাকটার সংক্রমন অথবা পুন আক্রমন হতে পারে। এজন্য আলসার বা আলসার জাতীয় উপরোক্ত কোন সমস্যা দেখা দিলে বা না কমলে একজন পরিপাকতন্ত্রের বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
Prof. Dr. Mahbub H Khan MBBS, PhD-Liver Med (Sydney) DSM (Vienna) Website: www.profmahbubhkhan.com Mobile 01911356298