মারাত্মক লিভার অসুখ হেপাটাইটিস বি
মারাত্মক লিভার অসুখ হেপাটাইটিস বি
 
১৯৬৫ সালের কথা, বুলুমবার্গ নামের একজন চিকিৎসা বিজ্ঞানী এক অষ্ট্রেলিয়ান আদিবাসির রক্ত থেকে একটি ভাইরাস আবিষ্কার
করলেন, যেটা অষ্ট্রেলিয়ান এন্টিজেন হিসেবে স্বিকৃতি পেল। পরবর্তিতে এই ভাইরাসকে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস রুপে পরিচিতি পেল। বিশ্ব স্বাস্থ
সংস্থা হিসাব অনুযায়ী সারা পৃথিবীতে ২ বিলিয়ন মানুষ কোন না কোন সময় হেপাটাইটিস বি ভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত হয়েছে।
 

                   
Diagram of B virus
কিন্তু ২৮৭ মিলিয়ন মানুষ দীর্ঘ মেয়াদি ভাবে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের বহন করে চলেছে, যাহা HIV ভাইরাস আক্রান্তদের ৪ গুন। প্রতি বৎসর প্রায় ৮৮৭০০০ মানুষ বি ভাইরাস জনিত লিভারের অসুখে মারা যায়। বাংলাদেশে সাধারণ জনগনের মধ্যে ২–৬.৫% দীর্ঘ মেয়াদি ভাবে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের বাহক। এই অনুযায়ী সর্বোচ্ছ ১ ১/২ কোটি মানুষ বি ভাইরাসে আক্রান্ত। এই আক্রান্তরা তাদের জীবনে, ২০–২৫ ভাগ ২০–২৫ বৎসরের এর মধ্যে জটিল লিভার রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।
২. হেপাটাইটিস বি ভাইরাস একটি রক্তবাহিত অসুখ, যে কোন ভাবে হেপাটাইটিস বি যুক্ত মাধ্যেমের দ্বারা শরীরের এ ভাইরাস প্রবেশ করে রোগের সৃষ্টি করে।
How B virus enters into the body
                                                 
         
উল্লেখ্য যোগ্য মাধ্যম গুলো: ১. শরীরে রক্ত ও রক্ত থেকে তৈরী পদার্থ নেওয়া ২.শিরায় নেশার ইনজেকশন ৩.শরীরে উলকি কাটা ( tattoos) ৪.আক্রান্ত মা থেকে নবজাতক ৫. বি ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যাক্তির সাথে যৌন মিলন উল্লেখ যোগ্য। এছাড়াও হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্তের ইনজেকশনের সুচ অন্যের শরীরে ফুটলে, দাতের চিকিৎসার কারনে ও চুলকাটার সময় হেপাটাইটিস বি রোগীর রেজর ব্যাবহারে এই রোগ ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যাক্তির থুথুর মাধ্যমে এই রোগ শরীরে প্রবেশ করতে পারে। আক্রান্ত মায়ের দুধ নবজাতকের জন্য নিরাপদ তবে খেয়াল রাখতে হবে স্তন ও স্তনের বোটায় কোন ক্ষত না থাকে।

                                                               
 
Tattoos
৪. হেপাটাইটিস বি ভাইরাস শরীরে প্রবেশের ৫০ – ১৮০ দিন পর বি ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে রোগ শুরু হয়। অল্প সংখকের মধ্যে রোগ লক্ষন পরিলক্ষিত হতে পারে। ক্রনিক হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের মত এটা একটা নিরব ঘাতক। রোগ লক্ষনের মধ্য জ্বর, ক্ষুদামন্দা, হলুদ চোখ, প্রসাব হলুদ, খাবারের গন্ধ সহ্য না করতে পারা,পেটে ব্যাথা,দূবলতা,ও বমি।কিছু সংখ্যাক রোগীর মধ্যে গায়ে চুলকানি ও সাদাটে পায়খানা হাতে পারে।
চামড়ার উপর লাল স্পট পড়ে যেটাকে acrodermatitis বলে। এটি শিশুদের বেশি হয়।

 
Acrodermatitis
৫.হেপাটাইটিস বি ভাইরাস রোগের প্রকাশকে ২ স্তরে ভাগ করা হয়। ১) সল্প মেয়াদি : অর্থাৎ বি ভাইরাস শরীরে প্রবেশের পর ৬ মাসের মধ্যে রক্ত জীবানু মুক্ত হয়ে যায়। ২) দীর্ঘ মেয়াদি : ৬ মাস পরও শরীরে বি ভাইরাস উপস্থিত থাকে। । সল্প মেয়াদি হেপাটাটিস বি রোগে ৯৫% ভাগের বেশি বিশ্রামের মাধ্যেমে সম্পূর্ন ভালো হয়ে যায়। অন্যরা রোগের দীর্ঘ সুত্রিতায় পতিত হন। ধীরে ধীরে রক্তে বিলরুবিন বাড়ে এবং গায়ে চুলকানি ও সাদা পায়খানা হয়। এইরুপ অবস্থাকে Choestatic hepatitis বলে। খুব সল্প সংখ্যক রোগী লিভার ফেলিইউর ও কিডনী ফেলিইউর আক্রান্ত হিয়ে মৃত্যু বরন করে।
৬. দীর্ঘ মেয়াদি অবস্থানকে ক্রনিক হেপাটাইটিস বি রোগ বলে। সল্প মেয়াদি আক্রান্তের , নবজাতক ৯০ ভাগ, ৫ – ৬ বৎসর উপরে শিশুর ৪০ ভাগ এবং বড়দের ৫ ভাগ দীর্ঘ মেয়েদি হেপাটাটিস বি রোগে উপনিত হয় ফলে পর্যায় ক্রমে ক্রনিক হেপাটাইটিস বি বিভিন্ন স্তর পার করার পর
২০ – ৩০ ভাগ রোগী ২০ – ২৫ বৎসরের মধ্যে লিভার সিরোসিস ও ক্যানসারে উপনিত হতে পারে।
              
             Variceal bleeding  Progression of Liver disease over time 
পরিনামে পেটে পানি জমা, খাদ্য নালীর শিরা মোটা হয়ে ফেটে রক্ত বমি, লিভার ফেলিইউর ও লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। লিভার ফেলিইউর, লিভার ক্যানসার ও রক্তবমি হেপাটাইটিস বি এর মরনঘাতি রুপ।

Cirrhosis and Liver cancer

Ascites
৭. রক্ত পরীক্ষার মাধ্যেমে রক্তে হেপাটাইটিস বি রোগের উপস্থিতি ধরা যায়। প্রাথিমিক ভাবে HBsAg পরীক্ষার মাধ্যেমে বি ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা যায়। পরবর্তিতে সঠিক চিকিৎসা জন্য HBV – DNA, SGOT, SGPT, PT সহ আরও কিছু পরীক্ষা করা হয়।
                                                               
CT image of Liver cancer
Ultrasound, CT Scan ও Fibroscan মাধ্যেমে লিভারের গঠনগত অবস্থান নির্নয় করা ও লিভার ক্যানসারের উপস্থিতি ধরা যায়.
