|

ফ্যাটি লিভার : সচেতন হউন

 ফ্যাটি লিভার : সচেতন হ

 ১. আজ কাল মানুষ অনেক সাস্থ্য সচেতন। প্রায়শ অনেকে লিভারের আলট্রা সাউন্ড করার মাধ্যমে ফ্যাটি ও বড় লিভার নির্নয়ের পরে লিভার বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন। এটি একটা ভালো দিক। ২৫-৩০ বৎসর আগে এমন অবস্থা ছিল না।চিকিৎসকরা ও ফ্যাটি লিভার অসুখেকে কোন গুরুত দিত না।

 ২.লিভারের মধ্যে সাভাবিক এর চেয়ে বেশি চর্বি জমলে ফ্যাটি লিভার হয়।ফ্যাটি লিভার দুই ধরনের ১.) মদ্যপান জনিত ২.)মদ্যপান ব্যাতিত ফ্যাটি লিভার বা ইংরেজিতে NAFLD বলা হয়। এশিয়ান দেশ গুলোতে ৫-১৫% মানুষ ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত। আমার প্রাকটিসের আমি যে সংখ্যক ফ্যাটি লিভার দেখি তাতে মনে হয় আমাদের দেশে এই সংখা সাধারণ মানুষের মধ্যে আরও বেশি। আজ আমি ফ্যাটি লিভারের বিভিন্ন দিক গুলো তুলে ধরবো।

৩.NAFLD রোগের কোন সুনিশ্চিত কারন আজ ও পর্যন্ত অজানা। তবে মেদবহুল দেহ,অতিরিক্ত ওজন, ডায়াবেটিস, রক্তে অধিক পরিমান চর্বির উপস্থিতি এবং বিভিন্ন ঔষধ সেবনের পার্শপ্রতিক্রিয়া ফ্যাটি লিভার হওয়া আংগা আংগিক ভাবে যুক্ত।

 ৪.রোগের প্রাথমিক দিকে বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমন শারিরিক দুর্বলতা,ক্ষুধামন্দা, পেটের ডান ধারে ব্যাথা যাহা একটু চাপে লিভারের উপরে ব্যাথা অনুভত হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি ভাবে ক্রনিক লিভারের রোগের সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে লিভার সিরোসিস,লিভার ফেলিইউর ও খাদ্যনালী ফোলাশিরা ফেটে রক্তবমি উল্লেখযোগ্য।

৫. প্রাথমিক পর্যায়ে পেটের আল্টাসাউন্ডের মাধ্যমে ফ্যাটি লিভারের নির্নয় করা হয়।লিভারের ওজনের ৫% বেশি চর্বি থাকা সাবাভিক নয়। ৫-১০% এর বেশি চর্বি থাকলে ফ্যাটি লিভার বলা হয়। MRI ও CT Scan এর মাধ্যমে ফ্যাটি লিভার নির্নয় করা যেতে পারে তবে বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া এগুলোর প্রযোজন হয় না। তবে লিভারের বায়োপসির মাধ্যমে ও সঠিক ভাবে ফ্যাটি লিভার নির্নয় করা হয়। এই টেষ্টটি CT ও MRI Scan এর মত বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া প্রয়োজন হয় না।

৬.লিভারের ALT AST ALK Phosphatase সাভাবিকের চেয়ে যদি বাড়ে তাহলে লিভারের প্রদাহ বা inflammation বলে ধরা হবে।এই ক্ষেত্রে এটির নন এলকোহলিক ষ্টিয়াটো হেপাটাইটিন বা NASH বলা হয়। NASH ফ্যাটি লিভারের একটা খারাপ রুপ, যেটা ৩০% NAFLD এর ক্ষেত্রে ঘটে। ক্রমান্নয়ে ২০-২৫ বৎসরের ২০-২৫ ভাগ মানুষের মধ্যে লিভারের সিরোসিস হতে পারে।ফলশ্রুতে পেটে পানি জমা, খাদ্যনালীর ভিতরে শিরা মোটা হয়ে অধিক রক্ত চাপে ফেটে যাওয়ার কারনে রক্তবমি হয়। ফলে শতকরা ৩০-৫০ ভাগ মানুষ প্রথম বারের রক্ত ক্ষরনের পর মৃত্যু মুখে পতিত হয়। এছাড়া লিভার ফেলিইউর ও লিভার ক্যানসার সৃষ্টি হতে পারে। এখানে জেনে রাখা দরকার যে ফ্যাটি লিভারের সাথে হার্ট,ক্রনিক, কিডনি অসুখ, ডায়াবেটিস ও ব্রেন ষ্টোকের ঝুকিও জড়িত।এটাও জানা দরকার যে ফ্যাটি লিভার অন্যান লিভার রোগ,যেমন Hepatitis B ও C সহ বেশ কিছু কিছু লিভারের অসুখের গতি ও প্রকৃতি ত্ববান্তিত করে।

৭. বর্তমান ফ্যাটি লিভার এর কোন সৃক্রিত চিকিৎসা নেই। যদিও কিছু ঔষধ ফ্যাটি লিভার এ চিকিৎসা কিছু কাজ করে। তবে ওজন কমানে, প্রতিদিন ১-২ ঘণ্টা হাটা,চর্বি যুক্ত খাবার,ও ভাতের পরিমান কমানো,ও ডায়াবেটিস নিয়ন্তন ফ্যাটি লিভার চিকিৎসার মূল মন্ত্র।সুতরাং দৈনন্দিন জীবন ধারা পরিবর্তন এই রোগের চিকিৎসা খুবই গুরতপূর্ন।

৮. ফ্যাটি লিভারের আক্রান্ত ব্যাক্তিরা রোগ ধরা পরার পর লিভার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবেন। ফ্যাটি লিভারের আড়ালে অন্য কোন লিভারের অসুখ আছে কিনা তাহা নির্নয় করতে হবে। লিভারে ফ্যাটের পরিমাণ ও লিভার শক্তের (stiffness) এর পরিমাণ নির্নয়ের প্রয়োজন। রক্তের সুগার ও lipid profile করাতে হবে।

প্রফেসর ডাঃ মাহবুব এইচ খান

লিভারও গ্যাসট্রোলজী বিশেষজ্ঞ

Similar Posts