| |

একিউট ভাইরাল হেপাটাইটিসের প্রতিকার ও প্রতিরোধ

একিউট ভাইরাল হেপাটাইটিসের প্রতিকার ও প্রতিরোধ

একিউট ভাইরাল হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হলে বিশ্রামে থাকতে হবে যতদিন পর্যন্ত খাওয়ার রুচি, বমি বা বমি বমি ভাব এবং লিভার ফাংশন ভালোর দিকে না যায়। অতিরিক্ত পরিশ্রম করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সারাদিন বিছানায় শুয়ে থাকার কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। ক্লান্তিকর হতে পারে এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং সহজে হজম হয় এমন খাবার খেতে হবে।

Unhygenic sugar cane juice

ডায়াবেটিস না থাকলে Glucose জাতীয় জিনিষ বেশি খাবেন। চর্বি জাতীয় জিনিস পরিহার করা উচিৎ। পার্টিতে বোরহানি এবং সালাদ না খাওয়াই ভাল। পথে ও হাটবাজারে বিক্রেতার তৈরি আখের রস পান করবেন না। বিক্রেতার তৈরি ফুসকা এবং চটপটি ভাইরাল হেপাটাইটিস A এবং E ছাড়াও পানি বাহিত অন্যান্য মারাত্মক রোগ (টাইফয়েড ও কলেরা) ছড়াতে পারে। কারণ এগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে তৈরি করা হয।

 

 

এজন্য আমরা A ও E ভাইরাস আক্রান্ত কিছু রোগীর মধ্যে একই সময় টাইফয়েড দ্বারা আক্রান্ত হতে দেখতে পাই। বেশ কিছু বছর আগে আমার চেম্বারে আসা এক হেপাটাইটিস E রোগীর কাছ থেকে জানলাম যে বিয়ের পার্টিতে খেয়ে তাদের সঙ্গে আরও ১৭ জন জন্ডিসে আক্রান্ত হয়েছে। যদিও ঐ রোগীগুলির আমি দেখেনি তা সত্ত্বেও আমি মোটামুটি নিশ্চিত তারা পানি বাহিত ভাইরাল হেপাটাইটিসে আক্রান্ত, যেটা E ভাইরাস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বিশুদ্ধ পানি দিয়ে তৈরি বোরহানি এবং স্বাস্বসম্নত ভাবে তৈরি করা ছালাদ না খেলে কেমন পরিস্থিতি হতে পারে এটা নিয়ে তা ভাল ভাবে বুঝা যাবে। কাজের বুয়া দিয়ে তৈয়ারি ছালাদ , জুস শরবত না করে নিজেরা করার চেষ্টা করতে হবে। এভাবে পানি বাহিত ভাইরাল হেপাটাইটিস ও অন্যান্য রোগ থেকে বয়স্ক ও বাচ্চারা নিরাপদ থাকবে।
ঘুমের ওষুধ খাওয়া বন্ধ করতে হবে যদি সে ঘুমের বড়ি খায়। বিড়ি, সিগারেট তামাক পরিহার করতে হবে। কোন মতেই মদ্যপান কাম্য নয়। মদ পান এবং হারবাল মেডিসিন কারনে লিভারের প্রদাহ বা হেপাটাইটিস বেড়ে যেতে পারে। প্যারাসিটামল ও গায়ে ব্যাথার ঔষধ (NSAID) কবিরাজি ঔষধ ব্যাবহার খুব প্রয়োজন না হলে খাওয়া উচিৎ হবে না। বেশি মশলা ও তেল জাতীয় জিনিষ না খাওয়া করা ভালো। উপুযুক্ত ব্যাবস্তা গ্রহন না করে একিউট হেপাটাইটিস B অথবা C আক্রান্ত সঙ্গীর সাথে যৌন মিলনের ফলে অন্যসঙ্গী B , C হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। ভাইরাল হেপাটাইটিসে আক্রান্ত মায়ের বাচ্চাকে স্তন খাওয়ানো নিরাপদ।

 

No to Alcohol drink

TB রোগটির ঔষধ বন্ধ রেখেই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে অতি সতর্ক ভাবে মেডিসিন খেতে হবে। অনেক ক্ষত্রে একিউট হেপাটাইটিস রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করা প্রয়োজন হতে পারে। এদের মধ্যে লিভার ফেলিইউর হওয়ার প্রাথমিক লক্ষন দেখা দিলে বা লিভার ফেলুইউর হলে, একটানা বমি,মুখে কোন খাবার সহ্য না করতে পারলে, প্যানক্রিমাটাইটিসে আক্রান্ত হলে অথবা কিডনী ফেলিইউর হলে। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি হল যে E ভাইরাসে আক্রান্ত গর্ভবতি মহিলাদের লিভারফাংশন টেষ্ট এমশঃ বাড়ার দিকে গেলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে । এছাড়াও হেপাটাইটিস রোগীদের বিশেষ ক্ষেত্রে এন্টিভাইরাল ঔষধ দরকার হলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া দরকার।ঝাড় ফুক ও মালাপড়ায় জন্ডিস নিরাময়ে কোনও কাজ হবে না তবে কেবল সান্ত্বনা মাত্র।

Hepatitis E vaccine
Hepatitis E vaccine
Hepatitis E vaccine

একিউট হেপাটাইটিস প্রকোপ কমাতে গেলে প্রতিশোধক টিকা দিতে হয়। ফ্যামিলি মেম্বার এবং রোগীর ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা লোকদের জরুরি ভিত্তিতে টিকার ব্যাবস্থা করতে হবে A,B,E এই ৩টি ভাইরাসের টিকা রয়েছে। A,B ভাইরাস টিকা সারা পৃথিবীতে প্রতিরোধক হিসেবে ব্যাবহার করে। একবার সম্পুর্ন এক কোর্স হেপাটাইটিস a টিকা নিয়ম মাপিক নিলে সারা জীবনের মত রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বহাল থাকে এবং A আক্রমন তিরোহিত হয়ে যায়। হেপাটাইটিস বি এর ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন কার্যকর হয়ে হেপাটাইটিস B আক্রান্তর ব্যক্তি দীর্ঘদিন (20-30 YEARS) B আক্রমণ থেকে থেকে রক্ষা পেতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে হেপাটাইটিস A এবং B টিকা দেওয়ার ফলে অনেক দেশে একিউট হেপাটাইটিস A এবং B হ্রাস পেয়েছে। বিশ্বে চায়না ছাড়া অন্যকোন দেশে এখন পর্যন্ত E ভাইরাসের টিকা চালু হয়নি। ভ্যাকসিন কার্যকর হলে E আক্রমন প্রতিহিত করে।
প্রতিরোধের অন্য আর একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো হেপাটাইটিসের আক্রমণ হতে বাচতে হলে ভাইরাস গুলি যেসব মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে সে বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করবেন

Chinese E vaccine has been introduced in Namibia

এছাড়াও যেসব ভাইরাসের ভ্যাকসিন আছে তা সঠিক মাত্রায় এবং সঠিক সময় পর্যন্ত নিতে হবে এবং প্রয়োজনে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে কার্যকারিতা পরীক্ষা করা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে হেপাটাইটিস D ভাইরাস হেপাটাইটিসে B ভাইরাসের সাহায্য ছাড়া শরীরে বাড়তে পারে না। কার্যকর বি ভাইরাসের টিকার কারনে D ভাইরাসের আক্রমণ তিরোহিত হয়। তবে এটা জানা দরকার যে হেপাটাইটিস B ও D ভাইরাস দুটি দ্বারা একত্রে আক্রান্ত হলে লিভারের প্রদাহ তীব্র হয় এবং দীর্ঘমেয়াদি লিভার জনিত সমস্যা গুলি বেশি হয়, ঔষধের কার্যকারিতা কমে যায় এবং মৃত্যুর হার ও বেশি।

 

একিউট হেপাটাইটিস আক্রান্তদের বিশেষ ক্ষেত্রে antiviral ঔষধ ব্যাবহার করা হয়। একিউট B,C, herpes ও D এর ক্ষেত্রে হেপাটাইটিসের ক্ষেত্রে antiviral ব্যাবহারে লিভারের আক্রমনের তীব্রতা কমে আসে এবং পরবর্তীতে দীর্ঘ মেয়াদি বা ক্রনিক হেপাটাইটিসের আক্রানন্তের ভাগ কমিয়ে আনে। একুউট ভাইরাল হেপাটাইটিস E আক্রান্তদের অসুখের তীব্রতা কমাতেও ইদানীং antiviral ব্যাবহার করা হচ্ছে। antiviral কোন পরিস্থিতিতে এবং কিভাবে এসব রোগীদের উপর ব্যাবহার করতে হবে তার সম্যক জ্ঞান থাকতে হবে এই জন্য লিভার বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিতে হবে।

 

Prof. Mahbub H Khan
MBBS, PhD-Liver Med (Sydney) DSM (Vienna)
www profmahbubhkhan.com
Mobile: 01911356298,01747317126

Similar Posts