Best iver Doctor in Dhaka, BangladeshProf. Dr. Mahbub H Khan

আতঙ্ক সৃষ্টিকারী Cobid-19 অসুখের বায়োডাটা ও চালচলন

২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের কথা, আতঙ্ক সৃষ্টিকারী একটা জীবাণু চীনের উহান শহরে তান্ডব শুরু করলো। মহাযুদ্ধের মতো মৃত্যুভীতি নিয়ে তার কার্যক্রম শুরু করলো। দেখাগেল একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভাইরাস যেটা শুধু চীন নয় পরবর্তিতে  সারা পৃথিবীতে আতঙ্ক সৃস্টি করেছে। বিশ্বব্যাপী এই জীবাণুর সম্ভাব্য আক্রমণ থেকে বাচার জন্য প্রতিটি দেশ তোড়জোড় শুরু করে দিলো। প্রস্তুতি নেয়া সত্ত্বেও অল্প সময়ের এই ভাইরাস  বিশ্বের অনেক  দেশে ছড়িয়ে পড়লো। এই  ভাইরাস টি  ইন্ফলুএন্জা A ভাইরাসরের অন্তর্গত Corona ফ্যামিলি ভুক্ত একটি নতুন অতিথি । 

  ১৯৬৬ সলে Tyrell & Bynoe বর্ণনায় Corona ভাইরাসের  কথা স্থান পায় ।  Seasonal Flu ভাইরাস থেকে Corona ভাইরাস পৃথক করা হয়। এই RNA ভাইরাসটি গোলাকার, বাইরের খোসার উপরে অনেক সুচালো বস্তুতে সজ্জিত এবং ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপে দেখতে সৌর করোনার মতো । ৭ টি করোনা ভাইরাসের সম্পূর্ণ নূতনটির নাম দেয়া হয় SARS Cov-2। বিগত দুটি মহামারী SARS-Cov এবং MARS Cov করোনা ভাইরাস ঘটিত ছিল । বর্তমান SARS Cov-2 উপরোক্ত দুটি করোনা ভাইরাস থেকে বেশ কিছু আলাদা হলেও জেনিটিক সিকোয়েন্স অনুযায়ী SARS-Cov  সাথে ৭০ % এবং MASH-Cov ৫০% সাথে মিল্ পরিলক্ষিত হয় । SARS Cov-2 ভাইরাসটি Covid-19 রোগের কারণ। Covid -19 সংক্রমণটি গৃহপালিত  অথবা বন্য পশু পাখীর মধ্যে যেমন গৃহপালিত গবাদি পশু,উট,বিড়াল, বাদুড় ইত্তাদি Corona  ভাইরাসের হোস্ট হিসাবে কাজ করে। Covid-19 রোগের বিষয়ে প্রতিনিয়ত নূতন নতুন গবেষণা ও অভিজ্ঞতার জন্য এই রোগ সম্বন্ধে অনেক নুতুন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। Covid-19 রোগ সম্বন্ধে সম্যক ধারণা পেতে আরো অনেক সময়  অপেক্ষা করতে হবে।

১০৩ টি SARS-Cov2 ভাইরাস জিনোম বিশ্লেষণ করে  দেখা  গেছে যে ভাইরাসটি দুইটি বড় ভাগে বিভক্ত। ) L Type (৭০%): ধরনটির ব্যাপকতা অনেক বেশি অনেক আক্রমণাত্মক এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে; চিনে উহানের রোগীদের মধ্যে দেখা যায় ) S Type (৩০%) কম আক্রমণাত্মক; চীনের বাইরের দেশগুলিতে  ছড়িয়ে পড়ছে। । ভাইরাসটি কত আক্রমণাত্মক ও ক্ষমতা সম্পন্ন তা ২০১৯ সালের  ডিসেম্বর থেকে পর্যন্ত আক্রান্ত ও মৃত মানুষের সংখ্যা  দেখলে বুঝা যাবে । ৯২০ তারিখ পর্যন্ত বিশ্বের ২১৩ টি দেশ এবং অঞ্চলগুলির ৭২০০৭৪২ লোক এই ভাইরাস  দিয়ে সংক্রামিত হয়েছে আর একই সময়ে মৃতের সংখ্যা ৪০৮৭৬৯। এই সংখ্যাটি আরও বেশি হতে পারে যদি Covid-19 পরীক্ষা আরও বৃহত্তর পরিসরে করা যেত। জনসংখ্যার তুলনায় অধিকাংশ দেশে সীমিত পরীক্ষার কারনে এই সংখ্যা কম বলে অধিকাংশ গবেষক মনে করেন । অনেকের বিশ্বাস বিশ্বের অনেক দেশ রাজনৈতিক সুবিধা নিতে এবং তাদের জনসংখ্যার খুব আতঙ্কিত না করতে  Covid -19 আক্রান্ত রোগীদের প্রকৃত চিত্র প্রকাশ করেনি । যেমনটি করা হয়েছিল  যুদ্ধরত সৈন্যদের মনোবল বজায় রাখার  জন্য প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষে ঘটিত ১৯১৮ সালের Spanish  ফুলুতে । 

SARS Cov-2 কয়েকভাবে এক মানুষ থেকে অন্য মানুষকে সংক্রামিত করে । উল্লেখযোগ্য মাধ্যমগুলো মধ্যে ১) ড্রপলেট বাহিত ইনফেকশন: আক্রান্ত মানুষের  হাঁচি,কাশি দিয়ে জীবাণুযুক্ত নির্গত বড় তরল ফোঁটা  (৫-১০ মাইক্রন সাইজ) শ্বাস প্রশ্বাসের মধ্য দিয়ে কাছের ও ৩ ফুট দুরত্বের মানুষকে সংক্রামিত করে । ২) সংস্পর্শের মাধ্যমে: হাত দিয়ে সংক্রামকযুক্ত কলুষিত বস্তুকে স্পর্শ করা এবং  চোখ,মুখক ও নাকের মিউকাস মেমব্রেনকে ওই হাত দিয়ে ঘষা ৩) এরোসল বাহিত ইনফেক্শন: সূক্ষ্মতর  ড্রপপ্লেট (<৫ মাইক্রন সাইজ) বায়ু মিশ্রিত কনা হয়ে অ্যারোসোল তৈরী করে অনেকক্ষণ থেকে নিম্নতম ৩ ঘন্টা পর্যন্ত বাতাসে ভাসতে থাকে এবং শ্বাস প্রশ্বাসের মধ্য দিয়ে মানুষকে সংক্রামিত করে । ৪) ফিকেওরাল স্প্রেড: মুখ দিয়ে প্রবেশের পর পরিপাকতন্তের সংক্রমণ ঘটায় । ইদানিং পর্যবেক্ষণে মল এবং বর্জ্য জলের মধ্যে SARS Cov-19 এর উপস্থিতি লক্ষণ করা  গেছে। এই ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে শ্বাসকষ্টের লক্ষণগুলি সম্পুর্ন ভাবে চলে যাওয়ার পরও  বেশ কিছুদিন  ধরে মলত্যাগের মাধ্যমে ভাইরাসটি বাহির হতে থাকে। অ্যাঞ্জিওটেনসিন-রূপান্তরকারী এনজাইম ACE 2 মেসেঞ্জার RNA গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সিস্টেমে বেশি পরিমানে উপস্থিত থাকে। ভাইরাসটি মানুষের কোষে প্রবেশের জন্য এই ACE 2 receptor কে ব্যবহার করে।

জীবাণু শরীরে প্রবেশের ১৪ দিনের মধ্যে রোগ লক্ষণ দেখা দেয়, তবে ২৪ দিন পর্যন্ত হতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি এবং জাপানের তথ্য দেখায় যে ১০ ৫০% আক্রান্ত ব্যক্তির কোনো রকম রোগ লক্ষণ ছিলো না। কোভিড-19 রোগে বিভিন্ন লক্ষণ লক্ষ্য করা গেছে । রোগীদের একটি একটি বড় দল থেকে প্রাপ্ত রোগ লক্ষণগুলো প্রকাশের তথ্যগুলি  বেশি থেকে কম হার ভিত্তিতে হিসাবে উল্লেখ করা হলো। Fever (88.7%), Cough (67.8%), Fatigue (38%) ,Sputum production (33.7%), dyspnoea (18.7%), sore throat (13.9%), headache (13.6%), Diarrhoea (5%),Vomiting (5%) ।  এছাড়াও আরো কিছু রোগের লক্ষণ যেমন গায়ে ব্যাথা, পেপটিক আলসারের মত ব্যাথা ও রক্তবমির উপসর্গ গুলো দেখা দিতে পারে  । খাবারের স্বাদ না পাওয়া এবং রুচি নষ্ট হওয়ার লক্ষনও দেখা দিতে পারে । গুরুতর বা গুরুতরভাবে অসুস্থ রোগীর মধ্যে হালকা থেকে মাঝারি জ্বর অথবা কোনও জ্বর  নির্ণয়র নাও করা যেতে পারে । কিছু ক্ষেত্রে  অতিমাত্রা ইমুন রিঅ্যাকশনের জন্য অনিয়ন্ত্রিত  সাইটোকাইনের উত্পাদন হয় এবং” Cytokine storm”  সৃষ্টি করে । এছাড়াও এই রোগের অন্যান্য মারাত্মক পরিণতি সমূহের মধ্যে ARDS, MODS., SEPSIS, DIC উল্লেখযোগ্য।

রোগ নির্ণয়ের জন্য  SARS Cov-2 RNA RT-PCR  পরীক্ষাটি  সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে পরীক্ষাটিকে “Gold Standard”  হিসাবে ধরা হয় পরীক্ষাটি  করতে সাধারণ ভাবে  নাকের অনেক ভিতর থেকে , গলা থেকে  এবং শ্বাসনালীর নিম্ন ভাগ থেকে  নিঃসৃত শ্লেষ্মা নেয়া হয় । নাকের গভীরের , শ্বাসনালীর নিচের অংশ প্রাপ্ত ও জোর করে কাশিতে বাহির হওয়া থুতুর নমুনাতে জীবাণু বেশি মাত্তায় পাওয়া যাওয়ার ফলে পরীক্ষাটির পজিটিভ রেজাল্ট পাওয়ার সম্ভবনা বেশি । SARS cov-2 RNA পরীক্ষাটিতে ফলস পজিটিভ নেগেটিভ হওয়ার কিছু সম্ভাবনা থাকে । ফলস  নেগেটিভ কারণগুলো হচ্ছে: RNA  নির্ণয়  পদ্দ্বতি এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ,  যেমন আমেরিকা UCLA সেন্টারের এনালাইটিক পদ্ধতি অনুযায়ী  ভাইরাসের ডিটেকশন লেভেল ৫০০ copies/ml of fluid। এর লেভেল এর নিচে থাকলে ভাইরাস টেস্ট নেগেটিভ হবে ।  বিভিন্ন ধরনের PCR মেশিনে বিভিন্ন মাত্রা ভাইরাল লোড পর্যন্ত ( ভাইরাল কণার সংখ্যার একটি পরিমাপ)  নির্ণয় করতে পারে। সঠিক ভাবে পরিমাণ মতো নমুনা না নেয়া, ম্যাটেরিয়ালস শুকিয়ে যাওয়া এবং পরীক্ষাটি আক্ক্রান্ত রুগীর থেকে  খুব প্রাথমিক পর্যায়ে বেশি দেরিতে পরীক্ষা করা । এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে রোগের  ৫ দিনের মধ্যে ভাইরাসের পরিমান বেশি থাকে পরে  ভাইরাসের পরিমান কমে আসে । একজন মার্কিন মহামারী বিশেষজ্ঞের মতে কোনও ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার ফলাফল বর্তমানে ১০০ ভাগ সঠিক নয়। অন্য একজন মার্কিন বিশেষজ্ঞ উল্লেখ করেছেন যে Covid-19  ফলস পজিটিভ পরীক্ষার হার নিয়ে  তাদের কাছে এই মুহূর্তে খুব সামান্যই ডাটা রয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞদের  অভিমত এই যে যদি কেহ Covid-19  রুগীর সংস্পর্শে আসে অথবা রোগ লক্ষন থাকে সেক্ষেত্রে  SARS Cov-2 RNA  টেস্ট নেগেটিভ হলেও ধরে নিতে হবে যে সে Covid-19 আকক্রান্ত । নেগেটিভ ক্ষেত্রে পুনরায় RNA  পরীক্ষাটি  করা প্রয়োজন । খুব কম পরিমাণে ভাইরাস পরিমাপ করতে পারে এমন মেশিনগুলি খুব সংবেদনশীল। রক্তে SARS Cov-2 RNA সনাক্তকরণ গুরুতর অসুস্থতার দিক নির্দেশনা করে । গুরুতর Covid-19  অসুখে RNA পরিষ্কার হতে অনেক দেরি লাগে এজন্য ১২২০ দিন হাসপাতালে থাকা লাগতে পারে। । উচ্চতর SARS Cov-2 ভাইরাল লোড Covid-19 রোগের তীব্রতা বাড়ায় । অন্যদিকে গুরুতর রোগে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ভাইরাল লোড বেশি থাকে। SARS COV-2 দুটি ধরণের অ্যান্টিবডি  তৈরি করে : ১) IgM antibody ২) IgG anti body যেখানে  IgM antibody আগে রক্তে পাওয়া যায় ।. Covid-19  রোগ লক্ষণের ৭-২০দিনের  মধ্যে এগুলি শনাক্ত করা যায় । এগুলি হল অতীত Covid-19 সংক্রমণের প্রমাণ। আঙ্গুলের মাথা থেকে রক্ত নিয়ে পরীক্ষা করা হয় ১৫ মিনিটের  মধ্যে ফল পাওয়া যায়। নির্ভুল অ্যান্টিবডি এবং পরীক্ষাগুলি রোগ লক্ষণ ও রোগ লক্ষণ বিহীন ভাবে  আক্রান্তের ব্যাপকতা নির্ণয় সহায়তা করতে পারে  এবং   ভাইরাসের প্রকৃত বিস্তারকে মূল্যায়ন করতে সাহায্য করে। বাস্তবে রক্তে অ্যান্টিবডি উপস্থিতি সনাক্ত হলে  Covid-19 সংক্রমণকে প্রতিহত করতে পারে, তবে সবসময় নয়। সুইস ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট Roche এর  গবেষণা থেকে জানা যায় যে কেউ যদি Covid-19 আক্রান্ত হয় তবে এটি  ১০০ % সময় সঠিক পজিটিভ অ্যান্টিবডি নির্ণয় করতে পারে তবে কারো SARS Cov-2 ভাইরাস ধরা না পড়লে এটি ৯৯.৮% এরও বেশি সঠিক নেগেটিভ ফলাফল দেয়, যেটা খুবই আশাপ্রদ। কারণ আগের গবেষণাগুলিতে এন্টিবডি নির্ণয়ের হার অত্যন্ত হাতাশাবাঞ্জক ছিলো । অনান্য টেস্ট গুলির  মধ্যে : IL6 antibody level. CRP, D-dimer, ALT ,  AST , LDH, CBC গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তির মধ্যে বর্ধিত আকারে পাওয়া যেতে পারে। 

PCR  ও antibody ছাড়াও  Covid-19 আরও কিছু পরীক্ষা করা যেতে পারে তবে সেগুলি সুনির্দিষ্ট নয়, এ গুলোর মধ্যে CXR ও CT chest গুত্বপূণ। রোগের প্রথম দিকে CXR  স্বাভাবিক  হলেও পারে ফুসফুসের দুই ধারে কনসলিডেশন দেখা যেতে পারে। CT scan গ্রাউন্ড গ্লাস অস্বচ্ছতা দেখা যেতে পারে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে অসুস্থতা সনাক্তকরণের ২ দিনের মধ্যে  ৫৬% রোগীদের CT Scan  স্বাভাবিক থাকে । কিছু বিশেষজ্ঞ দেখেছেন যে SARS Cov-2 RNA পজিটিভ হওয়ার  আগে CT-Chest  পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় । অন্য দিকে  Covid-19 রোগীরদের  উপর আর একটি পর্যবেক্ষনে দেখা গেছে RT-PCR  পজিটিভ হওয়ার আগেই ৬০%-৯৩%  রোগীর  মধ্যে CT chest এ Covid-19 সামঞ্জস্যপূর্ণ  লক্ষন ধরা পড়েছিল । অন্যদিকে যেসব রোগীর RT-PCR নেগেটিভ ছিল তাদের ৭৫% chest CT পজিটিভ, এর মধ্যে ৪৮ % Covid-19 রোগে আক্রান্ত হওয়ার অতি সম্ভাবনাময় হিসাবে এবং ৩৩% সম্ভাব্য কেস হিসাবে বিবেচিত হয়েছিল । 

অসুস্থাতার তীব্রতার তিনটি স্তরের প্রকাশভঙ্গি ও সম্ভাব্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা। 

)  মৃদু  প্রাথমিক সংক্রমণ : 

এটি সাধারণত অনির্দিষ্ট লক্ষণগুলি (অর্থাত অসুস্থতা ভাব , নাক দিয়ে পানি পড়া, হাঁচি, কাশি, জ্বর ইত্যাদি) দিয়ে প্রকাশ পায় । রেসপিরেটরি শ্লেষ্মার নমুনার RT-PCR  টেস্টিং মাধ্যমে রোগ নির্ণয়  করা হয় ।, সিরামে SARS-CoV-2 IgG and IgM antibody, CBC , chest imaging  LFT পরীক্ষাগুলি .রোগ নির্ণয়ে সহায়তা করতে পারে।  এ পর্যায়ে চিকিত্সার লক্ষণীয় বিষয় গুলির উপর. ভিত্তি করে চিকিৎসা দিতে হয় । এই পর্যায়ে এন্টিভাইরালের ভূমিকা জানা না থাকলেও অ্যান্টি-ভাইরাল থেরাপিটি যদি সহজলভ্য হয় তবে এই গ্রুপের রোগীদের এন্টিভাইরালটি প্রয়োগে লক্ষণ গুলির সময়কাল হ্রাস, সংক্রামকতা হ্রাস এবং রোগের সম্ভাব্য অগ্রগতিতে সুবিধা দিতে পারে। রোগ থেকে সুস্থ হয়ে উঠতে মৃদু আক্রান্তদের দুই সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগে। ৮১% রুগী এই শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত ।

) মাঝারি সংক্রমণ : 

ফুসফুসসের প্রদাহ শুরুর মাধ্যমে  অসুখ প্রকাশ  পায় । রক্তের অক্সিজেন মাত্রা স্বাভাবিক অথবা কম থাকতে পারে।  রোগীদের ভাইরাল নিউমোনিয়া, কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট  এবং রক্তের অক্সিজেন মাত্রা কম  (repiratory rate> 30/min oxygen saturation at rest<93%, P/F ratio <300 mm Hg) হতে পারে । CXR এবং / বা CT chest পরীক্ষা তে দুই ফুসফুসের ভিতরে infiltration বা গ্রাউন্ড গ্লাসের মত অস্বচ্ছতা দেখা দিয়ে ফুসফুসে >৫০% আক্রান্ত করতে পারে। CBC তে ক্রমবর্ধমান লিম্ফোপেনিয়া এবং লিভার ফাংশন টেস্টে ট্রান্সমিনাইটিস থাকতে পারে । Covid-19 বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রোকালসিটোনিন সাধারণত কম থেকে স্বাভাবিক থাকে । এই রোগীদের সম্ভবত পর্যবেক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা দরকার । এই অবস্থায় লক্ষণভিত্তিক চিকিত্সা ব্যবস্থা মনোনিবেশ করতে হবে। রক্তের অক্সিজেন মাত্রা কম না থাকলে সে ক্ষেত্রে  রোগীদের কর্টিকোস্টেরয়েড দেয়া উচিত হবে না । অন্যদিকে  তীব্র শ্বাসকষ্ট , রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা. .অতি কম থাকলে রোগীদের mechanical ventilation প্রয়োজন হতে পারে । একই সাথে যুক্তিপূর্ণ ভাবে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি থেরাপি ব্যবহার করা যেতে পারে । কিছু জায়গায় “সহানুভূতিশীল” পদক্ষেপের মাধ্যমে অ্যান্টি-ভাইরাল Remdesivir, Favipiravir  ব্যবহার করা যেতে পারে। রোগ থেকে সুস্থ হয়ে উঠতে এ ধরণের  আক্রান্তদের সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগে। ১৪% COVID-19 রোগীদের এই অবস্থা হতে পারে।

৩) সংকটপূর্ণ পর্যায়:

 এটি COVID-19 রোগীদের সংখ্যালঘু (৫%) এই অবস্থায় যেতে পারে। এই পর্যায়ে অতিমাত্রা ইমুন রিঅ্যাকশনের জন্য অনিয়ন্ত্রিত সাইটোকাইনের উত্পাদন হয় এবং” Cytokine storm” সৃষ্টি করে । এরকম অবস্থার মাঝে অ্যাডাল্ট রেসপিরেটরি ডিস্ট্রেস সিনড্রোম (ARDS) ও মাল্টি অর্গান ডিসফাংশান সিন্ড্রোমগুলি (MODS) দ্রুত বিকাশ ঘটে। ফলে ফুসফুস এবং অন্যান্য গুরুত্তপূর্ণ অর্গান ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং রোগটি দ্রুত অগ্রগতির ফলে ICU চিকিৎসার  প্রয়োজন হয় এবং অনেক রোগী মারা যায়। । রক্তের IL -2, IL -6, IL -7, গ্রানুলোকাইট- কলোনী স্টিমুলেটিং ফ্যাক্টর (GCF), ম্যাক্রোফেজ ইনফ্ল্যামেটরি  প্রোটিন, 1-alpha,TNF alpha. CRP, Ferritin D-dimer, Troponin  এবং BNP বাড়তে পারে। ইমিউনোমোডুলেটরি থেরাপি সিস্টেমিক প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। কর্টিকোস্টেরয়েডগুলি সাথে  TOCILIZUMAB (IL-6 inhibitor) or ANAKINRA (IL-1 receptor antagonist) ব্যবহার যুক্তিযুক্ত । Remdesivir, Favipiravir  এবং ইমিউনোগ্লোব্যুলিন (IVIG) কাজ করতে পারে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যায় যে ভর্তির  ৪৮ ঘন্টার মধ্যে IVIG-প্রয়োগে করলে  শুধুমাত্র ভেন্টিলেটর ব্যবহার হ্রাস করে না, হাসপাতাল এবং আইসিইউ থাকার সময় কাল হ্রাস করে, পরিণামে ২৮ দিনের মৃত্যুর হারও কমে আসে। রোগ থেকে সুস্থ হয়ে উঠতে এ ধরণের  আক্রান্তদের সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগে।

কিছু রোগীর রক্তের অক্সিজেন মাত্রা কমার  কোন লক্ষন নাও দেখা দিতে পারে। এমনকি রক্তের Spo2 ৪০-৮০% থাকা সত্ত্বেও তাদের শ্বাসকষ্টের কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। এজন্য বাড়িতে থেকে যারা চিকিৎসা নেন তাদের প্রতিদিন  Pulse Oximeter দিয়ে রক্তের অক্সিজেন মাত্রা পরীক্ষা করা দরকার । রক্তের অক্সিজেন  মাত্রা কমে আসলে চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন হবে । যেসব ক্ষেত্রে ডাক্তাররে সরণাপর্ণ হবেন: A. 1) Oxygen Saturation: Spo2 <92%  2) Temp>39 C 3) Respiratory rate >25/min  4) Pulse>111 min এই অবস্থায় রোগীকে জরুরী ভিত্তিতে হাসপাতালের নিয়ে যেতে হবে । B. 1) Oxygen Saturation: Spo2  93-94% 2) Temp 38,1-39 C 3) Respiratory rate 22-24/min 4) Pulse 100-110 min এই অবস্থা রোগীরদের চিকিৎসকের পরামর্শ অথবা পর্যবেক্ষনে থাকার প্রয়োজন।

একটি বৃহত গুরুপের রুগীদের রোগ তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায়  যে যেসব রোগীদের অন্য কোনো রোগ ছিল না তাদের  মৃত্যুর হার ছিল ০.% অন্যদিকে যারা অন্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন (diabetes, High BP,Heart disease, liver disease and Kidney failure, Cancer chemotherapy প্রাপ্ত)  তাদের মৃত্যুর হার ছিল ১০.% । একই এনালাইসিসে দেখা  যায় ৮০ বত্সৱরের এবং ৭০ বত্সৱরের  উপর রুগীদের মৃত্যু হার যথাক্রমে ১৪.% % । ৬০ বত্সৱরের ও ৫০ বত্সৱরের  উপর মৃত্যুর হার যথাক্রমে .% .% । অন্যদিকে ৪০ বত্সৱরের উপরের এবং ৪০ এর নিচে এই হার যথাক্রমে মাত্ৰ .% .% । অন্য এর একটি প্রতিবেদনে দেখা যায় যে সর্বমোট গড় মৃত্যুর হার ২.৩% তবে গুরুতর অসুস্থদের মধ্যে সার্বিক মৃত্যুর পরিমাণ ছিল ৪৯ % । ব্রিটিশ এক গবেষণায় বেশ কিছু ফ্যাক্টর  সমন্বয় করার দেখা যায় যে Covid -19 আক্রান্ত সাদা ব্রিটিশ  বাসিন্দাদের তুলনায় বাংলাদেশি বাসিন্দাদের মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় দ্বিগুণ । বাংলাদেশের ২০ তারিখের  ডাটা অনুযায়ী Covid-19.রোগের সামগ্রিক মৃত্যুর হার ছিল ১.৩%।হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ২৬%৩২% ICU ভর্তির প্রয়োজন  দেখা  দেয়, সকল রোগীদের ৩%-% এর তুলনায় ভর্তি রোগী ২০-৪২% মধ্যে ARDS দেখা দেয় । অন্যদিকে ICU রোগীদের মধ্যে ৬৭%-৮৫% ARDS দেখা দেয় । 

গর্ভবতী মহিলাদের মারাত্মকভাবে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকির মাত্ৰা স্বাস্থ্যকর সংক্রামিত প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় একই রকম. । অধিকাংশ গর্ভবতী মহিলারা মাঝারি ফ্লু লক্ষনে এবং কিছু সংখ্যক শ্বাসকষ্টের  ভুগতে পারেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি  গবেষণায় দেখা যে  গর্ভাবস্থার যারা মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন  তারা গর্ভাবস্থার  তৃতীয় ত্রৈমাসিকের মধ্যে ছিলেন। গর্ভবতী  মা  যাঁদের ওজন বেশি বা মেদবহুল ছিলেন তারা সহ যাদের উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে এর মতো সমস্যা ছিল, তাদের মারাত্মক অসুস্থতা হওয়ার ঝুঁকিও বেশি ছিল। এখনো পর্যন্ত জন্মের সময় মা থেকে সন্তানের সংক্রমণ লক্ষ্য করা যায়নি। ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষা অবলম্বন করার পর  ব্রেস্ট ফিডিং নিরাপদ হিসাবে বিবেচিত । 

Covid-19  চিকিৎসার বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য জন্য আমার Facebook id: Mahbub Khan ও Facebook Page: Prof. Dr. Mahbub H Khan এ পূর্ব প্রকাশিত প্রবন্ধ “স্বল্প কার্যকর  ও সম্ভাবনাময় Covid-19 চিকিৎসার ঔষু চিকিৎসা পন্থা” টি দেখুন  অথবা ওয়েবসাইটে www.profmahbubhkhan.com হেলথ আর্টিকেল Covid ক্লিক করুন

লেখকঃ অধ্যাপক মাহবুব এইচ খান 

পিএইচডি-লিভার মেডি( সিডনী বিশ্ব:) ডি গ্যাস্ট্রো (ভিয়েনা)
সদস্য: আন্তর্জাতিক স্টাডিজ অফ লিভার

Similar Posts